কার্বন নিঃসরণের বিদ্যমান মাত্রা কমাতে না পারলে বিশ্বজুড়ে খরা, দাবানল, বন্যা এবং খাদ্য ঘাটতির মতো সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসংখ্য মানুষ। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে শুরু করবে। ভয়াবহ অবস্থা ঠেকাতে মানবজাতির হাতে সময় মাত্র ১২ বছর। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
ভয়াবহ ভবিষ্যৎ মোকাবেলায় আইপিসিসি প্যানেলের পক্ষ থেকে বিশ্বের সব সরকারকে দ্রুততম সময়ে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আইপিসিসি প্যানেল বলেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ইতোমধ্যে এক ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকেছে। তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিজ্ঞানীদের মতে, তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে দীর্ঘ গ্রীষ্মকাল, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঘটনা বাড়তে থাকবে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত যে হারে কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, তার পরিমাণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। আর তা আনতে পারলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের জলবায়ু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অ্যান্ড্রু কিংয়ের মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার সুযোগ ক্রমশ কমছে। প্যারিস চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা ঠেকানো যাবে না।
অতিরিক্ত উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বাস্তুসংস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এবং অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে জানালেন আইপিসিসি’র ওয়ার্কিং গ্রুপ দুইয়ের সহকারী চেয়ারম্যান হ্যান্স আত্তো পোর্টনার। ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিবর্তন ঠেকানো না গেলে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রের উচ্চতা প্রায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে এবং ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ প্রবালদ্বীপ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
রিপোর্ট অনুসারে বায়ুমণ্ডল থেকে মূলত দুই উপায়ে কার্বন কমানো যেতে পারে। প্রথমত, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া (বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি) বাড়াতে হবে যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, দ্বিতীয়ত; কার্বন মজুত করে রাখা অথবা প্রযুক্তির অপসারণ করা। তবে এই দুই পন্থা ছাড়াও নতুন আরো পন্থা অনুসরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। তবে এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সচেতনতা।
সম্প্রতি জাতিসংঘের স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশনের অপর এক রিপোর্টে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক খাবার উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বে প্রতিদিন অভুক্ত ও পুষ্টিহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধু আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলেই অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৬ মিলিয়নে।